অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে চলছে ইলিশ শিকার। নদীর পাড় থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে অন্যত্র বিক্রি করছেন। আবার অনেকে সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনছেন।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা, ছোট ভাকলা ইউনিয়ন, চর দেলুন্দি, কাওয়ালজানি ও কলার বাগান এলাকায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে দেখা যায়।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি পদ্মার পাড়ে দেখা গেছে, একটি ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় ইলিশ শিকারের জন্য কয়েকজন জেলে জাল ছাড়াচ্ছেন। নদীর পাড়ে খাবারের প্যাকেট নিয়ে অপেক্ষা করছেন এক ব্যক্তি। ইলিশের ক্রেতা পরিচয়ে জানা গেলো তার নাম আনাই খাঁ। বাড়ি তেনাপচা এলাকায়। তার দুই বড় ছেলে ও প্রতিবেশী মিলে সকালে পদ্মা নদীতে ইলিশ নেমেছেন। মাছ শিকার শেষে তারা পাড়ে এসে খাবার খাবেন।
এ সময় আনাই খাঁ বলেন, ‘আমার অন্য ছেলে নৌ পুলিশের কাছে নৌকা ভাড়া দিয়েছে। ওই ছেলে পুলিশের সঙ্গে অভিযানে থাকে। অধিকাংশ জেলের সঙ্গে আমার ছেলের পরিচয় আছে।’
নদীর পাড়ে মাছ কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী কামরুল শেখ। তিনি এ সময় ইলিশ কিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তা বিক্রি করেন।
কামরুল বলেন, ‘পদ্মা নদীতে বর্তমানে ইলিশ কম থাকলেও যেগুলো পাচ্ছে তা ওজনে বেশি। অধিকাংশ ইলিশই ৭০০ থেকে এক হাজার গ্রাম। ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মো. শাহরিয়ার জামান সাবু জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণে ৬ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে টানা ২২ দিন ইলিশ শিকার, বিপণন, মজুত ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৯ জেলের কারাদণ্ড, চার জনের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, প্রায় ৯০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস ও ২০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযান চালিয়ে চলে যাওয়ার ফাঁকে জেলেরা নৌকা নিয়ে আবার মাছ মারতে শুরু করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বলেন, নৌ-পুলিশ জেলেদের নৌকা আটকের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। গত বুধবার দিবাগত রাতে দৌলতদিয়া কলার বাগান ও কয়েকটি স্থান থেকে পাঁচটি নৌকা নৌ-পুলিশ আটক করে। এর মধ্যে হাসমত নামে এক জেলের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে নৌকাটি ছেড়ে দেয়। নৌ-পুলিশকে টাকা দিলে গোপনে মাছ শিকার করা যায় বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির বলেন, ‘টাকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কাজ যেই করবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক সময় পদ্মা নদীতে অন্য এলাকার পুলিশ এসেও ধরে নিয়ে যায়।
অভিযানকালে জেলেদের খবর পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে সিরাজুল কবির বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমার সন্দেহ হচ্ছিলো। মাঝিদের সঙ্গে জেলেদের যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’
Leave a Reply